কলকাতা, যা বরাবরই প্রতিবাদের শহর হিসেবে পরিচিত, আবারও এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। আরজি কর মেডিকেল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় পুরো শহর। এই ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সঙ্গীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ কলকাতায় একটি শো করার কথা ছিল শ্রেয়ার। তবে শহরের বুকে ঘটে যাওয়া এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্রেয়া সিদ্ধান্ত নেন সেই শো বাতিল করার। এটি ছিল শ্রেয়ার প্রতিবাদের ভাষা। তিনি জানিয়ে দেন যে এ সময় গান গেয়ে আনন্দ দেওয়া সম্ভব নয়। পরিবর্তে অক্টোবরে একটি নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়, এবং ১৯ অক্টোবর শ্রেয়া ঘোষাল সেই বাতিল হওয়া শোয়ের পরিবর্তে পারফর্ম করেন।
মঞ্চে গানেই প্রতিবাদ
শ্রেয়া ঘোষালের পারফর্মেন্সে দর্শকরা যেন খুঁজে পান অন্যরকম এক শক্তি, এক প্রতিবাদের ভাষা। এই শোয়ের মূল আকর্ষণ ছিল তাঁর নতুন গান, ‘তুমি বন্ধু আজ শুনবে…’। গানটি যেন এক সোজাসাপটা বার্তা, যা সমাজের বিভিন্ন অত্যাচার, মিথ্যা, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করে:
“যত ইচ্ছের ভাঙা ডানা, যত গল্প নজরবন্দি যত সন্ধের যাওয়া মানা, যত রাত্রির অভিসন্ধি সব মিথ্যের আর ধন্দের, তাই রক্তের সোঁদা গন্ধে শুধু মুছে যাবে, ঘুচে যাবে, বেঁধে রাখা গণ্ডি এ যে শরীরের চিৎকার, জাগে ভাঙনের শব্দে তাই ভাঙে পাড়, ভাসে ঘর, ভাঙে চেনা সুপ্তি এ যে শরীরের চিৎকার, জাগে ভাঙনের শব্দে তুমি বন্ধু আজ শুনবে…”
শ্রেয়া ঘোষালের গানের মাধ্যেমে উপস্থিত শ্রোতারা এক অন্যরকম আবেগের জোয়ারে ভাসেন। শ্রেয়া যখন এই গানটি শেষ করেন, তখন হাততালি দিতে নিষেধ করেন দর্শকদের। তার অনুরোধ ছিল, এই গানটি যেন শুধুই শোনার, অনুভবের, এবং মনের মধ্যে রেখে দেওয়ার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
শ্রেয়া ঘোষালের এই প্রতিবাদী শো-এর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। শ্রোতারা এবং নেটিজেনরা গানটি শুনে আবেগে ভেসে যান। কেউ জানতে চেয়েছেন গানটির নাম, আবার কেউ কমেন্ট বক্সে জানিয়েছেন শ্রেয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান।
এর আগেও শিল্পীরা এই ধরনের প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা ছড়িয়েছেন। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংহের গান ‘আর কবে?’ প্রতিবাদী মিছিলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেই পথ ধরে শ্রেয়া ঘোষালও তার সুরে তুলে ধরলেন সমাজের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ও যন্ত্রণার কথা।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, সঙ্গীত শুধুই বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি প্রতিবাদেরও এক শক্তিশালী হাতিয়ার।